রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
বিষাক্ত সিসার প্রকোপে ৫ গরুর মৃত্যু, অসুস্থ শতাধিক গবাদিপশু |
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৯ অক্টোবর ২০২৫ খ্রী.
অবৈধ কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্যে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও প্রাণী; প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ স্থানীয়দের।
জামালপুর সদর উপজেলার তুলশীরচর ইউনিয়নের ডিগ্রিরচর এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যাটারি পোড়ানো কারখানা। পরিবেশ আইন অমান্য করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির মাধ্যমে দূষণ ছড়াচ্ছে চারদিকে। এরই মধ্যে এসিড ও সিসা মিশ্রিত ঘাস ও পানি খেয়ে এক কৃষকের ৫টি গরু মারা গেছে এবং এলাকার শতাধিক গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

বুধবার সকালে ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নরুন্দি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার ১৮জন শ্রমিককে হেফাজতে নেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী ডিগ্রিরচর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ তীর ঘেঁষে রাতের আঁধারে এই ব্যাটারি পোড়ানো কারখানায় প্রতিদিন আগুন জ্বালিয়ে পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কাজ চলছে। এতে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্য। এতে আশপাশের মানুষ, গবাদিপশু ও কৃষিজমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দরিদ্র কৃষক হেকমত আলী জানান, তার ১২টি গরু ছিল। দুধ বিক্রিই ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। তিনি বলেন, “সন্তানের মতো লালন করেছি গরুগুলারে। ব্যাটারির কারখানা আমার সব শেষ করে দিলো। কেউ কিছু বলেনি, না জানলে আমি গরু নিয়ে ওদিক যেতাম না।”
হেকমতের মেয়ে ভাবনা ও লিমা বলেন, তাদের কোনো জমিজমা নেই, নানা বাড়িতে বড় হয়েছেন। এখন তাদের বাবার শেষ সম্বলও শেষ হয়ে গেছে।

স্থানীয় জিয়ারুল ইসলাম জানান, হেকমতের ৫টি গরু মারা গেছে, বাকি গরুগুলোর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। প্রাণিসম্পদ অফিসে খবর দেওয়ার পর চিকিৎসা চলছে।
ময়মনসিংহ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সোলাইমান সরকার বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাটারি কারখানার বর্জ্য নদী ও জমিতে মিশে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু গবাদিপশুই নয়, সিসা মানুষের শরীরের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।”
নরুন্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. সজিব রহমান জানান, “জনরোষ থেকে রক্ষা করতে শ্রমিকদের হেফাজতে আনা হয়েছে। মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার পর এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।